ঢাকা,  বুধবার  ১৬ অক্টোবর ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বায়তুল মোকাররম কবে নির্মিত হয়েছিল, স্থপতি কে ছিলেন?

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বায়তুল মোকাররম কবে নির্মিত হয়েছিল, স্থপতি কে ছিলেন?

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ বায়তুল মোকাররম। এটি বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ। বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে মক্কার কাবাঘরের আদলে। এর চমৎকার স্থাপত্যশৈলী দারুণ দৃষ্টিনন্দন। তৎকালীন পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানি ‘বায়তুল মোকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠন করে এই মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন।

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের স্থপতি এ এইচ থারানি মসজিদটির নকশা প্রণয়ন করেন। তিনি মসজিদের নকশায় দোকান, অফিস, গ্রন্থাগার ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করেন।

bairul-mukarrom-market

পুরোনো এবং নতুন ঢাকার মিলনস্থল পল্টন এলাকায় অবস্থিত মসজিদটি বাংলাদেশের বৃহত্তম মসজিদ। এর ইতিহাস এবং গুরুত্ব নিয়ে অনেক বইও প্রকাশিত হয়েছে। ইতিহাসবিদ শরীফ উদ্দিন আহমেদ কর্তৃক সম্পাদিত ঢাকা কোষ থেকে জানা যায়, ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি আব্দুল লতিফ বাওয়ানি মসজিদ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। তার ২ বছর পর ১৯৬২ সাল নাগাদ মসজিদ নির্মাণের মূল কাজ মোটামুটি শেষ হয়।

oju

প্রাথমিকভাবে নির্মাণ কাজ শেষ হলে ১৯৬৩ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো এই মসজিদে নামাজ পড়া হয়। ১৯৬৪ সাল থেকে বায়তুল মোকাররম মার্কেট চালু হয়। নির্মাণের পর এই মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারতেন। পরে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকার মসজিদের ধারণক্ষমতা ৪০ হাজারে উন্নীত করে।

baitul-mukarrom-3

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ভেতরে সংরক্ষিত রয়েছে পবিত্র কাবাঘরের গিলাফের একটি অংশ। যা সৌদি আরবের বাদশাহ খালিদ ইবনে আবদুল আজিজ আল সাউদ বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সউদি আরব সফরকালে উপহার দেন। এই গিলাফে সুরা হজ এর ২৬ নম্বর আয়াত লেখা আছে।

baitul_mukarrom_5

১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। বর্তমানে মসজিদটি আটতলা। নিচতলায় মার্কেট কমপ্লেক্স, দোতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় নামাজ আদায় করা হয়।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রবেশ পথ রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা উঁচু। মসজিদে প্রবেশ করার পর রয়েছে কয়েকটি বারান্দা। সেগুলোতে তিনটি অশ্বখুরাকৃতি খিলানপথ রয়েছে। দুটি উন্মুক্ত অঙ্গন (ছাদহীন ভেতরের আঙ্গিনা) মসজিদের প্রধান নামাজ কক্ষে আলো ও বাতাসের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। 

baitul_mukarrom_6

তিনদিকে বারান্দা দিয়ে ঘেরা প্রধান নামাজকক্ষের মেহরাবটির আকৃতি আয়তাকার। এর আয়তন ২ হাজার ৪শ ৬৩ বর্গমিটার। মসজিদের ভেতরে সবার জন্য অজু করার ব্যবস্থা আছে। নারীদের জন্য রয়েছে পৃথক নামাজকক্ষ ও পাঠাগার।

baitul-mukarrom-women

প্রায় সাড়ে আট একর জমির ওপর নির্মিত মসজিদটি দেশের মুসলমানদের কাছে এক অন্যরকম মর্যাদার স্থান হয়ে উঠেছে। প্রতি শুক্রবার দূরদুরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসেন এই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে। মসজিদের সৌন্দর্য ও স্থাপত্য শৈলী দেখতে আসেন বিদেশি পর্যটকরাও। 

baitul-mukarrom-4

বর্তমানে বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতরে নামাজ আদায় ছাড়াও মুসলমানদের ধর্মীয় কার্যক্রম, আলোচনা সভা ও ইসলামি শিক্ষা প্রদানের নানা আয়োজন হয়। এটি বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। রমজান মাসে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ বায়তুল মোকাররমে ইফতার করেন। প্রতি ঈদে নামাজ পড়তে আসেন লাখো মানুষ। সব মিলিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদ ঢাকার গর্ব এবং পৃথিবীর সুন্দর মসজিদগুলোর একটি।