ঢাকা,  সোমবার  ০১ জুলাই ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

মহানবী সা.-এর সঙ্গে জিবরাঈল আ.-এর প্রথম সাক্ষাৎ যেমন ছিল

প্রকাশিত: ১০:০২, ২৯ জুন ২০২৪

মহানবী সা.-এর সঙ্গে জিবরাঈল আ.-এর প্রথম সাক্ষাৎ যেমন ছিল

ফাইল ছবি

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়ত লাভ করেছিলেন ৪০ বছর বয়সে। এই বয়সটিকে মানুষের পরিপক্কতা ও পূর্ণতার বছর বলা হয়।

নবুয়ত প্রাপ্তি ও পূর্ণতার বছরে পৌঁছার পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে নবুয়তের কিছু স্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ হতে থাকে। লক্ষণগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে স্বপ্নের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছিল। তিনি যখনই কোন স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবে পরিণত হতো। এভাবে ছয় মাস অতিবাহিত হলো।

এরপর মহানবী সা.-এর কাছে কোলাহল থেকে নির্জনতা বেশি পছন্দনীয় হলো। তিনি হেরাগুহায় নিরবচ্ছিন্ন ধ্যানে নিমগ্ন থাকা শুরু করলেন। এভাবে বেশি কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর  আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর মানুষের উপর স্বীয় রহমত বর্ষণের ইচ্ছা করলেন। 

জিবরাঈল আ.-এর মাধ্যমে কুরআনুল কারীমের কয়েকটি আয়াতে করীমা নাজিল করে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবুয়তের মহান মর্যাদায় ভূষিত করেন।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর বর্ণনায়—

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরবাচ্ছিন্ন নির্জনতায় ধ্যানমগ্ন থাকার সুবিধার্থে হেরা গুহায় অবস্থান করতেন। কোন কোন দিন ঘরে না ফিরে রাতেও সেখানে ইবাদত বন্দেগী এবং গভীর ধ্যানে নিমগ্ন থাকতেন। এ জন্য খাবার-পানী সঙ্গে নিয়ে যেতেন। 

নবুয়ত লাভের আগে এভাবেই কাটছিল তার সময়। এভাবে একদিন তিনি যখন ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ছিলেন, এমন সময় আল্লাহর দূত জিবরাঈল আ. তাঁর কাছে আগমন করে বললেন—

‘তুমি পড়'। তিনি বললেন, ‘পড়ার অভ্যাস আমার নেই।’ তারপর তিনি তাঁকে অত্যন্ত শক্তভাবে ধরে আলিঙ্গন করলেন এবং ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘তুমি পড়’। তিনি আবারও বললেন, ‘আমার পড়ার অভ্যাস নেই’। তারপর তৃতীয় দফায় আলিঙ্গনাবদ্ধ করার পর ছেড়ে দিয়ে বললেন ‘পড়-

‏‏اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ اقْرَأْ وَرَبُّكَالْأَكْرَمُ‏

অর্থ :  সেই প্রভুর নামে পড় যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্ত পিন্ড থেকে। পড় সেই প্রভূর নামে যিনি তোমাদের জন্য অধিকতর দয়ালু। (সূরা আলাক, আয়াত : ১-৩ )

তারপর ওহীর আয়াতগুলো অন্তরে ধারণ করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুটা অস্থির ও স্পন্দিত চিত্তে খাদিজাহ বিনতে খুয়াইলিদের ফিরে গেলেন এবং বললেন— 
‘আমাকে বস্ত্রাবৃত করো, আমাকে বস্ত্রাবৃত করো।’ খাদিজাহ রা. তাঁকে শায়িত অবস্থায় বস্ত্রাবৃত করলেন। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর তাঁর অস্থিরতা ও চিত্ত স্পন্দন কিছুটা কমলে তিনি তাঁর সহধর্মিনীকে হেরা গুহার ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করলেন। 
তাঁর অস্থিরতা ও চিত্ত চাঞ্চল্যের ভাব লক্ষ্য করে খাদিজা রা. তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন—

‘কোন ভয় করবেন না, আপনি ধৈর্য ধরুন। আল্লাহ কখনো আপনাকে অপমান করবেন না। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আপনি সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। অভাবগ্রস্তদের অভাব মোচনের চেষ্টা করেন। অসহায়দের আশ্রয় প্রদান করেন। মেহমানদের আদর-যত্ন করেন, অতিথিদের আতিথেয়তা প্রদান করেন এবং ঋণগ্রস্তদের ঋণের দায় মোচনে সাহায্য করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে অপদস্থ করবেন না।’

এভাবে শান্ত্বনা দেওয়ার পর খাজিদা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নাওফিলের কাছে যান। ওয়ারাকা তখন অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তার কাছে খাজিদা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা সবকিছু খুলে বললেন। সব শুনে ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল বললেন-

‘ইনি হচ্ছেন সেই মহান ফেরেশতা যিনি মূসা আলাইহিস সালামের কাছে এসেছিলেন। হায় যদি আমি যুবক হতাম এবং ওই সময় পর্যন্ত জীবিত থাকতাম যখন আপনার স্বজাতি আপনাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে’।

একথা শুনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কি! তারা আমাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে?’

ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল বললেন, জি। যখনই কোনো জনপদে কোনো রাসূল আল্লাহর একত্ববাদে দাওয়াত নিয়ে এসেছেন সেই জনপদের মানুষজন প্রথমে তার সঙ্গে শত্রুতাই করেছে।

(বুখারি, হাদিস : ৪৩, আর রাহীকুল মাখতুম)