ঢাকা,  শনিবার  ২৯ জুন ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও নিয়ম-কানুন

প্রকাশিত: ১৫:৪৯, ২৫ জুন ২০২৪

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও নিয়ম-কানুন

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও নিয়ম-কানুন

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের ইবাদত হলো তাহাজ্জুদ। দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর শ্রেষ্ঠ নামাজ হলো তাহাজ্জুদ।

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ’। (মুসলিম: ১১৬৩)

হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা উচিত। কেননা তা তোমাদের পূর্বেকার সজ্জন ব্যক্তিদের প্রতীক এবং তোমাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। নামাজ গুনাহসমূহ বিমোচনকারী এবং গুনাহের প্রতিবন্ধক। (তিরমিজি: ৩৫৪৯, সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১০৭৫)

সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে তাহাজ্জুদসহ রাতের নফল ইবাদত-বন্দেগির বিকল্প নেই। রাত জেগে নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পাশাপাশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত রাখা মুমিন মুসলমানের উচিত। 

রাতের শেষভাগে ঘুম থেকে ওঠে যে নামাজ আদায় করা হয়, মূলত সেটিই তাহাজ্জুদ। তাহাজ্জুদ একটি নফল ইবাদত। এই ইবাদত নেককার ও উত্তম বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ প্রকৃত মুমিন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গুরুত্বের সঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। পবিত্র কোরআনুল কারিমে তাহাজ্জুদ আদায়কারীর প্রশংসায় ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়..’। (সূরা: সাজদা, আয়াত: ১৬)

প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) জীবনে কখনও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকেননি। তবে উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য এটি সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা বা নফল। অর্থাৎ এ নামাজ আদায় করলে অশেষ পুণ্য ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, কিন্তু আদায় করতে না পারলে কোনো গুনাহ হবে না।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

সূরা ফাতেহার পর যেকোনো সূরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদার সঙ্গে একান্ত নিবিষ্ট মনে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম। কেরাত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজে পড়া জায়েজ আছে। তবে কারো কষ্টের কারণ হলে চুপিচুপি পড়া কর্তব্য।

২ রাকাত তাহাজ্জুদের নিয়ত করার পর তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সাধারণ নফল নামাজের মতোই সানা, সূরা ফাতেহা এবং অন্য সূরা মিলিয়ে এই নামাজ পড়তে হয়। রুকু, সেজদা, তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানো পর্যন্ত সবকিছুই অন্য নফল নামাজের মতোই।

এভাবে ২ রাকাআত করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম। যদি এশার নামাজের পরে বিতরের নামাজ পড়ে থাকেন, তবে তাহাজ্জুদ নামাজশেষে বিতর পড়ার দরকার নেই।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

নিয়ত মনের ব্যাপার। তাই মনে মনে ২ রাকাত তাহাজ্জুদের সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যায়। নির্দিষ্ট শব্দগুচ্ছ উচ্চারণের মাধ্যমে নিয়ত করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে আরবিতে এভাবে করা যায়- نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ - اَللهُ اَكْبَر ‘নাওয়াইতুয়ান উছাল্লিয়া রাকআতিত্তাহাজ্জুদি আল্লাহু আকবর’। অথবা বাংলায়- ২ রাকাআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি.. অতঃপর ‘আল্লাহু আকবর’ বলে নিয়ত বেঁধে নামাজ শুরু করা।

তাহাজ্জুদের রাকাতসংখ্যা

রাসূলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজ ২ রাকাত করে আদায় করতেন। তিনি কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত এবং কখনো ১২ রাকাত পড়েছেন। কিন্তু কেউ যদি এ নামাজ ২ রাকাত আদায় করেন, তাহলেও তার তাহাজ্জুদ আদায় হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) অধিকাংশ সময় ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে এটি আবশ্যিক নয়।

তাহাজ্জুদ নামাজের উত্তম সময়

রাতের শেষ প্রহরে ঘুম থেকে ওঠার পর তাহাজ্জুদ পড়া সবচেয়ে উত্তম। তবে এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত এই নামাজ পড়া যায়। আর এতে তাহাজ্জুদের ফজিলত লাভ হয়। কেননা তাহাজ্জুদ নামাজের মূল সময় এশার নামাজের পর থেকেই শুরু হয়, যদিও উত্তম সময় হলো ঘুম থেকে ওঠার পর।

তবে ঘুম ভেঙে তাহাজ্জুদ পড়া অধিক ফজিলতপূর্ণ। তাই যে তাহাজ্জুদ আদায় করতে চায়, সে এশার নামাজ শেষে ঘুমিয়ে পড়বে। চাই তা অল্প সময়ের জন্য হোক। এরপর রাতের মধ্য ভাগে জেগে অল্প সময়ে ২ রাকাত নামাজ পড়বে। এরপর যত রাকাত ইচ্ছে নামাজ আদায় করবে, তবে নামাজ হতে হবে ২ রাকাত করে। ২ রাকাত শেষে সালাম ফেরাবে, আবার ২ রাকাত পড়বে..। এভাবে যত রাকাত সম্ভব, তাহাজ্জুদ আদায়ের পর বিতির নামাজ আদায় করবে। (শায়খ বিন বাজ; কাইফিয়্যাতু সালাতুত তাহাজ্জুদ ওয়া কিয়ামুল লাইল, ফতোয়া নুরুন আলাদ দারব, খণ্ড: ১০, পৃষ্ঠা: ২১-২৪)

আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-এর কাছে রাসূল (সা.) এর তাহাজ্জুদ নামাজ (রাতের) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন। তারপর নামাজে দাঁড়াতেন এবং সেহরির পূর্বক্ষণে বিতির আদায় করতেন। এরপর প্রয়োজন মনে করলে বিছানায় আসতেন। তারপর আজানের শব্দ শুনে জেগে উঠতেন এবং অপবিত্র হলে সর্বাগ্রে পানি বইয়ে গোসল করে নিতেন নতুবা ওজু করতেন। তারপর নামাজ আদায় করতেন। (সুনানে নাসায়ি: ১৬৮০; মুসনাদ আহমদ: ২৫৪৭৪)

ঘুম থেকে উঠার সম্ভাবনা না থাকলে যা করবেন

ঘুম থেকে জাগার সম্ভাবনা না থাকলে এশার নামাজের পর ২ রাকাত সুন্নত ও বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েজ আছে এবং এই ২ রাকাত নামাজের ফজিলতও বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। সাউবান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রাত্রি জাগরণ কষ্টকর ও ভারী জিনিস, তাই তোমরা যখন (শোয়ার আগে) বিতির পড়বে, তখন ২ রাকাত (নফল) নামাজ পড়ে নেবে। পরে শেষ রাতে উঠতে পারলে ভালো, অন্যথায় এই ২ রাকাতই ‘কিয়ামুল লাইল’ এর ফজিলত লাভের উপায় হবে’। (সুনানে দারেমি: ১৬৩৫; সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১১০৬; তাহাবি: ২০১১)

ইয়া আল্লাহ! সব মুসলিম উম্মাহকে তাহাজ্জুদ নামাজ যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।