ঢাকা,  বুধবার  ০৩ জুলাই ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

করিডোর প্রদানে বাংলাদেশ’র ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে ভারত!

প্রকাশিত: ২০:১৯, ৩০ জুন ২০২৪

করিডোর প্রদানে বাংলাদেশ’র ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে ভারত!

সংগৃহীত ছবি

আন্তর্জাতিক আইনে পণ্য পরিবহনে ট্রানজিট একটি আবশ্যকীয় বিষয়। শুল্ক আরোপের বিধান না থাকলেও অবকাঠামো ব্যবহার রক্ষণাবেক্ষণের বিনিময়ে মাশুল ধার্য করা যায়। আন্তর্জাতিক আইনে ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে বহু বিধান রয়েছে, যেখানে অংশগ্রহণ করা দেশগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব রকম ব্যবস্থা রাখা হয়। নিরাপত্তাজনিত কোন বিঘ্ন ঘটলে সুবিধা দেয়া দেশ সঙ্গে সঙ্গে চুক্তিটি স্থগিত করতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতিকরণেও থাকবে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ । এতে  ট্রানজিট বা করিডোর সুবিধা দেয়া দেশের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে যায়, সুবিধা পাওয়া দেশটি। 

সাম্প্রতিক প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে স্বাক্ষরিত হয়েছে ১০টি সমঝোতা স্মারক। এর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ-ভারত ‘রেল ট্রানজিট স্মারক।  এ নিয়ে চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন না হলেও দেশজুড়ে শুরু হয়েছে হইচই।  নেতিবাচক তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

তথ্যমতে, ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধা আদান-প্রদান বিশ্বের অনেক দেশেই রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে বিষয়টি এখনও তেমন প্রচলিত হয়ে ওঠেনি। আর সেই সুযোগটিই কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অপতথ্য ছড়াচ্ছে সরকারবিরোধী কিংবা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধা আদান-প্রদান বাংলাদেশের লাভ কি এমন প্রশ্নও উঠেছে জনসাধারণের মনে।

ট্রানজিট ও করিডোর  প্রদানে কিছু নেতিবাচক শংকা থাকলেও সেটি খুব একটা ঘটেনা, যদি চুক্তির ধারাগুলো দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হয়।ট্রানজিট,ট্রান্সশিপ বা করিডোর প্রদানে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া ছাড়াও রাজনৈতিক কৌশলগত স্বার্থ নিহিত রয়েছে।আর এর অন্যতম রাজনৈতিক কৌশল হলো ট্রানজিট বা করিডোর প্রদানকারী দেশের ওপর গ্রহণকারী দেশের নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হওয়া।

বিশ্লেষনে দেখা যায়,  ভারতকে ট্রানজিট বা করিডোর প্রদানের ফলে ভারত বাংলাদেশের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে যাবে। এটি পুরোপুরি চালু হলে। আর ভারতের এ নির্ভরতাকে বাংলাদেশ দরকষাকষির ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে, যা কূটনীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বেশ প্রসিদ্ধ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অমীমাংসিত বিভিন্ন বিষয় যেমন তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি, সীমান্ত সমস্যা, সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তি, নন-ট্যারিফ বাঁধা দূরীকরণ ও বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ।ফলে ভারতকে অমীমাংসিত বিষয়গুলির ক্ষেত্রে দাবি আদায়ে বিবেচনা করতে বাধ্য করা যাবে, এই মডিউলে।

বিশ্লেষকদের মতে, কোনো দেশকে নির্ভরশীল করতে পারলে, দেশটিকে বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্রে  নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে।এরপর  ভারতসহ বিভিন্ন দেশের শুল্কমুক্ত সুবিধা আর পাওয়া যাবেনা, তাই শুল্কমুক্ত সুবিধা ধরে রাখতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক একটি 'কম্প্রেহেনসিভ ইকোনমি পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট-সেপা চুক্তি করেছে বাংলাদেশে। বাণিজ্য বাধা দূরীকরণ ও সেপা চুক্তি কার্যকর করতে ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পর্কের পাশাপাশি এই 'ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট'র পদক্ষেপ অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে।

তাছাড়া আন্তর্জাতিক আইনে পণ্য পরিবহনে ট্রানজিট একটি আবশ্যকীয় বিষয়। শুল্ক আরোপের বিধান না থাকলেও অবকাঠামো ব্যবহার রক্ষণাবেক্ষণের বিনিময়ে মাশুল ধার্য করা যায়। আন্তর্জাতিক আইনে ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে বহু বিধান রয়েছে, যেখানে অংশগ্রহণ করা দেশগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব রকম ব্যবস্থা রাখা হয়। নিরাপত্তাজনিত কোন বিঘ্ন ঘটলে সুবিধা দেয়া দেশ সঙ্গে সঙ্গে চুক্তিটি স্থগিত করতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতিকরণেও থাকবে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ । এতে  ট্রানজিট বা করিডোর সুবিধা দেয়া দেশের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে যায়, সুবিধা পাওয়া দেশটি। তাছাড়া দেশটির বড় রকম আর্থিক ক্ষতির চিন্তাও থাকে। তাই ট্রানজিট বা করিডোর প্রদানে করা হলেও ভারত বাংলাদেশ'র ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।