ঢাকা,  শনিবার  ০৬ জুলাই ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা:মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ভুল হিসেব ও বাস্তবতা

প্রকাশিত: ২০:১৮, ৩০ জুন ২০২৪

বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা:মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ভুল হিসেব ও বাস্তবতা

ফাইল ফটো

মার্কিন রিপোর্টটি বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় তারা ভালোভাবে স্টাডি না করে রিপোর্ট করেছে কেননা রিপোর্টে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে।ধর্মীয় আচরণ সূচকে ভালো দিকগুলোকেও নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। রিপোর্ট তৈরিতে  ‘কথিত’ ধর্মীয় কিছু নেতার অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে, সাধারণ স্তরের কারো বক্তব্য নেয়া হয়নি, যেটি জরুরি ছিল।কেননা ধর্মীয় নেতাদের অধিকাংশই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত।এক্ষেত্রে এই রিপোর্ট তৈরিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের  কয়েকজন বিতর্কিত নেতার বক্তব্যই নেয়া হয়েছে।

‘বাংলাদেশে বেড়ে চলেছে সংখ্যালঘু নির্যাতন-নিপীড়ন। মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে সাইবার নিরাপত্তা আইনের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে হিন্দুদের। এমনকি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের মসজিদে ইমাম নিয়োগ কিংবা জুমার খুতবা নির্ধারণেও প্রভাব খাটাচ্ছে সরকার। অর্থাৎ ধর্মীয় স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে পড়েছে বলে গত ২৬ জুন প্রকাশিত ‘রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম-২০২৩’ এ উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।

উক্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারের ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের মাত্রা, ধর্মীয় কাজে বাধা, সহিংসতায় দোষীদের সাজা দিতে ব্যর্থতার কথাও বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বৈষম্যের দিক তুলে ধরে বিভিন্ন ধর্মের নেতাদের অভিযোগ সামনে আনা হয়।এছাড়া গেল বছর আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসন নীরব ছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ‘সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে উল্লেখ করলেও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে সমর্থন করে বাংলাদেশ। বৈষম্যকে নিষিদ্ধ করে সব ধর্মের সমতা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। এরপরও নিজ নিজ ধর্মপালনে নানান প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন দেশটির জনগোষ্ঠী। এছাড়া প্রায় সব ক্ষেত্রেই ‘অবমাননাকর’ ফেসবুক পোস্টের জন্য সংখ্যালঘু সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে আদালত।’

এজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ করা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন। ২০২৩ সালের বেশ কয়েকটি মামলায় এমন চিত্র দেখা গেছে বলে জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।

তবে প্রতিবেদনটি একপেশে ও অসঙ্গতিপূর্ন বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন-নিপীড়ন অতীতের চাইতে অনেক কম, বিশেষভাবে বর্তমান সরকারের শাসনামলে তা উল্লেখযোগ্যহারে কমে এসেছে,কেননা বিএনপি শাসনসমলে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের বিচার হয়নি। কিন্তু বর্তমান সরকারের শাসনামলে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের এমন একটি ঘটনাও মার্কিন  রিপোর্টে নেই, যেখানে অপরাধীর বিচার হয়নি বা শাস্তি পায়নি।এছাড়া সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটি ব্যক্তি পর্যায়ের ও কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক। রাষ্ট্র বা সরকার কর্তৃক কোনো নির্যাতন বা বৈষম্যের একটি উদাহরণও নেই।

রিপোর্টে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে হিন্দুদের সাইবার নিরাপত্তা আইনের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটি সম্পুর্ণ অজ্ঞতাপ্রসূত,  কেননা এমন একটি ঘটনায়ও কোনো 'অজুহাত' ছিল না, রিপোর্টে তার উল্লেখও নেই। প্রতিটি ঘটনাতেই প্রমাণস্বাপেক্ষে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয়ে সংখ্যালঘুদের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরাই বেশি গ্রেফতার হয়েছে,কেননা সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় বিধিবিধান ও বিশ্বাস লালন পালনে নিরাপত্তা প্রদানে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।

এছাড়া রিপোর্টটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই বা  ধর্মীয় কাজে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও ধর্মীয় সহিংসতায় দোষীদের সাজা দিতে ব্যর্থতার যে অভিযোগ তাকেও হাস্যকর বলছেন বিশ্লেষকরা, কেননা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও কাজে বাধা প্রদান দূরে থাক সরকার সবসময়ই সকল ধর্মের আচার অনুষ্ঠান বা প্রচার প্রচারণায় পূর্ন নিরাপত্তা প্রদান, বাজেটে অর্থ বরাদ্দ,মসজিদ-মন্দির সহ সকল ধর্মের উপাসনালয় নির্মানে নজির সৃষ্টি করেছে,যা বিগত কোন সরকারই করতে পারেনি। এছাড়া ধর্মীয় যেকোন সহিংসতায় দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।এক্ষেত্রে বরং  বলা যায় মার্কিনিরাই বিঘ্ন সৃস্টি করেছে বারবার, কেননা যেকোনো সহিংস ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করলে বিচারের আগেই সবার আগে মার্কিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরকারে বিপক্ষে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দাড় করিয়ে ফেলেছে।

ধর্মীয় বৈষম্যের  দিক তুলে ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতাদের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাও সঠিক নয় বলে  অভিমত প্রদান করেন স্বয়ং ধর্মীয় কয়েকজন মুসলিম ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।তাদের সম্মিলিত অভিমত হলো বর্তমান সরকারের আমলেই বরং বৈষম্যের মাত্রা প্রায় জিরো পর্যায়ে চলে এসেছে।ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি,জনসংখ্যা অনুপাতের হার অনুসারে ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ ও বরাদ্দসহ সকল ক্ষেত্রেই প্রতিটি ধর্মের জনগোষ্ঠীদের জন্য প্রায় সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে বর্তমান সরকার।নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ'র একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, 'যাদের অভিযোগ সামনে আনা হয়েছে  তারা কেউই আমাদের সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেননা,বরং তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন দলের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

রিপোর্টটিতে মসজিদের ইমাম নিয়োগ ও জুমার খুতবা নির্ধারণে সরকারের প্রভাব খাটানোর অভিযোগও আনা হয়েছে, যার সাথে সরকারের আদৌ কোন সংযোগ নেই।কেননা সরেজমিনে দেখা যায় প্রতিটি মসজিদের ইমামগণ জুমার দিনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমসাময়িক নানান বিষয়েই নিয়মিত খুতবা প্রদান করেন, সরকারকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনাও করেন, যা ইউটিউবেও প্রচারিত হয়।আর বেসরকারি সকল মসজিদের ইমাম 'মসজিদ কমিটি' কতৃক সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়।এক্ষেত্রে সরকারের প্রভাব খাটানোর সুযোগই নেই।

অন্যদিকে ২০২৩ সালে  আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসন নীরব ছিল বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা একেবারেই অসত্য বলেই প্রতীয়মান হয়, কেননা উক্ত ঘটনা  তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৯ সদস্যও গুরুতর আহত হন।পরবর্তীতে ঘটনায় জড়িতদের তড়িৎ আইনের আওতায় আনা হয়েছে,যার বিচার কার্য চলমান রয়েছে।

সমালোচকরা বলছেন, মার্কিন রিপোর্টটি বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় তারা ভালোভাবে স্টাডি না করে রিপোর্ট করেছে কেননা রিপোর্টে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে।ধর্মীয় আচরণ সূচকে ভালো দিকগুলোকেও নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। রিপোর্ট তৈরিতে  ‘কথিত’ ধর্মীয় কিছু নেতার অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে, সাধারণ স্তরের কারো বক্তব্য নেয়া হয়নি, যেটি জরুরি ছিল।কেননা ধর্মীয় নেতাদের অধিকাংশই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত।এক্ষেত্রে এই রিপোর্ট তৈরিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের  কয়েকজন বিতর্কিত নেতার বক্তব্যই নেয়া হয়েছে যারা সরাসরি সরকারের সমালোচক।ফলে পুরো রিপোর্টটিই একপেশে হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।