ঢাকা,  শনিবার  ০৬ জুলাই ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শ্রীপুরের মিষ্টি কাঁঠাল যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়, পাঠানো হবে বিদেশে

প্রকাশিত: ২২:৪০, ৩ জুলাই ২০২৪

আপডেট: ২২:৪০, ৩ জুলাই ২০২৪

শ্রীপুরের মিষ্টি কাঁঠাল যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়, পাঠানো হবে বিদেশে

ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরের প্রতিটি গ্রামের অলিগলি, রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ির আঙিনা, ফলের বাগান—যেখানেই তাকাবেন আপনার নজর কাড়বে কাঁঠালগাছ। আর এসব গাছে ঝুলছে পাকা মিষ্টি কাঁঠাল। শ্রীপুরের কাঁঠালের সুখ্যাতি আছে দেশজুড়ে। পরিকল্পনা চলছে বিদেশে পাঠানোরও। কাঁঠালের রাজধানী হিসেবে খ্যাত ঐতিহ্যবাহী জৈনা বাজারের অবস্থানও শ্রীপুরে। কাঁঠালের এই বিশাল পাইকারি বাজার ইতিমধ্যে জমে উঠেছে। 

মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতা আর বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত থাকে কাঁঠালের বাজার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরোদমে চলে কাঁঠাল বেচাকেনা। সন্ধ্যার পর থেকে কাঁঠাল ট্রাকে ভরে পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন বাজারে। কাঁঠালের বাজার সৃষ্টি করে কৃষকদের উৎপাদিত কাঁঠালের ন্যায্য মূল্য পেতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কাঁঠাল রপ্তানির পরিকল্পনা করা হয়েছে।

উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে কমবেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয়। সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয় উপজেলার কাওরাইদ, তেলিহাটি, গাজীপুর ও মাওনায়। এসব ইউনিয়নের অনেক গ্রামে কাঁঠালের বড় বড় বাগান রয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার জৈনা বাজার এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেঁষে বসে কাঁঠালের বিশাল বাজার। সূর্য ওঠার আগেই পিক-আপ, ভ্যানগাড়ি, অটোরিকশা, ঠেলাগাড়িতে করে কাঁঠাল এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কাঁঠাল বিক্রেতারা। সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কাঁঠাল। গন্ধে ম ম করছে চারদিক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকাররা এই কাঁঠাল দামদর করে কিনে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় স্তূপ করেন। সন্ধ্যার পর থেকে স্তূপ করে রাখা কাঁঠালগুলো নির্দিষ্ট ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। 

জৈনা বাজারে ভ্যানগাড়িতে করে কাঁঠাল বিক্রি করতে এসেছেন যোগীরসিট গ্রামের কাঁঠাল ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া। কাঁঠালের বাজারে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, এ বছর সাড়ে ৪ লাখ টাকার বাগান কিনেছেন স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে। বাগানে ফলনও ভালো হয়েছে। ছোট-বড় কমবেশি সব গাছে কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে। ভোররাত থেকে বাগান থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে ভ্যানগাড়িতে করে জৈনা বাজারে বিক্রি করেন প্রায় প্রতিদিন। গত বছরের তুলনায় এ বছর কাঁঠালের দামও একটু কম বলে জানান তিনি। 

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকাররা এ সকল কাঁঠাল দামদর করে কিনে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় স্তূপ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকাররা এ সকল কাঁঠাল দামদর করে কিনে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় স্তূপ করেন।

গলদাপাড়া গ্রামের কৃষক আতিকুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছর গ্রামের পাইকারদের কাছে কাঁঠালের বাগান বিক্রি করি। এ বছর দামদরে মেলেনি, তাই বিক্রি হয়নি। দৈনিক হাজিরায় শ্রমিক নিয়ে পিক-আপে করে কাঁঠাল বিক্রি করছি জৈনা বাজারে। দাম খুবই কম। শ্রমিক খরচ আর পরিবহন খরচ দিয়ে আমাদের তেমন কিছু থাকে না। 

মুন্সিগঞ্জের পাইকার নায়েব আলী ব্যাপারী বলেন, ‘জৈনা বাজার থেকে কাঁঠাল কিনে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলায় কাঁঠাল বিক্রি করি। শ্রীপুরের জৈনা বাজার থেকে কাঁঠাল কিনি বহু বছর। এই অঞ্চলের কাঁঠাল অন্যান্য এলাকার চেয়ে মিষ্টি, সুস্বাদু আর রসালো। তাই আমাদের জেলায় এই অঞ্চলের কাঁঠালের বেশ চাহিদা। কিন্তু পরিবহন খরচ দিনে দিনে বেড়ে যাওয়ায় আমরা কৃষকদের বেশি দাম দিতে পারি না।’

জৈনা কাঁঠাল বাজারের ইজারাদার আব্দুল হান্নান বলেন, সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। পাইকারদের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়, যেন নির্বিঘ্নে কাঁঠাল কিনতে পারেন। 

পিক-আপ, ভ্যানগাড়ি, অটোরিকশা, ঠেলাগাড়িতে করে কাঁঠাল এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কাঁঠাল বিক্রেতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পিক-আপ, ভ্যানগাড়ি, অটোরিকশা, ঠেলাগাড়িতে করে কাঁঠাল এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কাঁঠাল বিক্রেতা।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বলেন, শ্রীপুর কাঁঠালের রাজধানী বলে পরিচিত। ইতিমধ্যে কাঁঠাল দিয়ে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরি করছেন অনেক উদ্যোক্তা। তার মধ্যে আছে কাঁঠালের আচার, চিপস, ঝুরিভাজাসহ অনেক খাবার। ইতিমধ্যে কাঁঠাল রপ্তানির জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কাঁঠাল বিভিন্ন দেশে রপ্তানি শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে চারটি উপজেলায় কাজ শুরু করছে ফাউন্ডেশন। উপজেলাগুলো হলো শ্রীপুর, কাপাসিয়া, মধুপুর ও সখিপুর। আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি হলে কৃষক কাঁঠালের ন্যায্য দাম পাবে। এ বছর উপজেলায় ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৬০ হাজার মেট্রিক টন কাঁঠাল।