ঢাকা,  মঙ্গলবার  ০২ জুলাই ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

গাজীপুরে সাপের কামড়ে মৃত যুবককে বাঁচাতে ঝাড়ফুঁকের আয়োজন

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২৯ জুন ২০২৪

গাজীপুরে সাপের কামড়ে মৃত যুবককে বাঁচাতে ঝাড়ফুঁকের আয়োজন

সংগৃহিত ছবি

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে রাতে বিলের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে সাপের কামড়ে প্রাণ হারিয়েছেন সাইফুল ইসলাম (৪০) নামের এক রাজমিস্ত্রি। কিন্তু ওই মৃত ব্যক্তিকে কড়ি চালান দিয়ে সুস্থ করা সম্ভব এমন আজব তথ্য দিয়ে ব্যাপক আয়োজন চালাচ্ছেন এক কবিরাজ। আর এমন খবরে হাজারো উৎসুক জনতা ভিড় জমিয়েছেন।

শনিবার (২৯ জুন) বিকেল থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা গ্রামে সাপের ছোবলে মৃত সাইফুলের চিকিৎসায় নেওয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি। বাড়ির পাশের একটি জমির মাঝে পোঁতা হয়েছে চারটি কলাগাছ। চারপাশে ঘেরাও দিয়ে বসানো হয়েছে কয়েকটি নতুন সিলভারের পানির কলস। কলাগাছের চার কোণে চারটি গ্লাসে রাখা হয়েছে দুধ ও একটা মহিষের শিং। আর রাতের অন্ধকার দূর করতে করা হয়েছে একাধিক বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা। জমিতে পোঁতা চারটি কলাগাছের মাঝে টেবিলের ওপর রাখা হয়েছে সাপের ছোবলে নিহত সাইফুল ইসলামের মরদেহ ও পাশের রাখা হয়েছে মৃত সাপ। এভাবেই চিকিৎসার মাধ্যমে জীবিত করবেন এক ওঝা। আর এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা গ্রামের পশ্চিম পাড়া বাইতুন নুর জামে মসজিদ এলাকায় ভিড় করেছেন আশপাশের কয়েকটি গ্রামের হাজারো উৎসুক মানুষ।

নিহতের স্বজনরা জানান, শুক্রবার (২৮ জুন) রাতে টর্চ হাতে টেঁটা দিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে মাছ ধরতে বাড়ির পাশে বিলে যান সাইফুল ইসলাম। হঠাৎ একটি সাপ তার পায়ে ছোবল দেয়। পরে তারা টেঁটা দিয়ে ওই সাপটিকে মেরে ফেলেন। পরে মৃত সাপ নিয়ে সাইফুল ইসলাম বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীকে সাপে ছোবল দেওয়ার ঘটনাটি জানান। রাতে ওঝার কাছে নিয়ে ঝাড়ফুঁক দেওয়ার পর নেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।

সাপের ছোবলে নিহত সাইফুল ইসলাম কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা এলাকার ইউনুছ আলীর ছেলে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। যথানিয়মে তার জানাজার সময় নির্ধারণ করে দুপুরে এলাকার মাইকে ঘোষণা করা হয়, খোঁড়া হয়েছে কবরও। হঠাৎ এক ওঝা এসে মৃত সাইফুল ইসলামের উপসর্গ দেখে চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে জীবিত করা সম্ভব বলে স্বজনদের জানান। তবে যে ওঝা চিকিৎসা করবে তার কোনো নাম-পরিচয় জানাতে চাননি।

নিহত সাইফুল ইসলামের সহকর্মী টাইলস মিস্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, শুক্রবার রাতে তিনজন টেঁটা দিয়ে মাছ ধরতে যাই। মাছ ধরার একপর্যায়ে সাইফুল ইসলামের বাম পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে সাপ কামড় দেয়। সঙ্গে থাকা অপর ব্যক্তি টেঁটা দিয়ে সাপটিকে মেরে ফেলেন। রাতেই তাকে চিকিৎসার জন্য মির্জাপুরের কুমদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত ঘোষণা করার পর অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে গ্রামে নিয়ে আসা হয়। নিয়ে আসার পর দেখলাম তার শরীর নরম, কিন্তু মৃত ব্যক্তির শরীর তো শক্ত হওয়ার কথা। তাকে যেভাবে ঘুরানো হচ্ছে সে ঘুরছে, একদম ঘুমন্ত মানুষের মতো। কবর খোঁড়াসহ দাফনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। দুপুর ২টায় জানাজার সময় নির্ধারণ করে এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় এক কবিরাজ এসে মরদেহ দেখতে চান। ওই কবিরাজ বলেন, ‘এটা ডেডবডি হয় নাই। আমরা কড়ি চালান দিব।’ কড়ি চালান দিয়ে সাইফুল ইসলামকে সুস্থ করা সম্ভব বলে ওই কবিরাজ জানান।

তবে ওঝাকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। ঝাড়ফুঁক দেওয়ার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে কবিরাজ সাভারে গিয়েছেন বলে জানা যায়।

এমন খবরে উপজেলা সদর থেকে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, জানাজা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ওই ওঝারা নাকি ৭ দিন আগের সাপে কাটা মানুষকেও জীবিত করতে পারে। এরপরই এই আয়োজন করা হয়েছে। সেটা দেখতেই আমি এসেছি।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম আব্দুল জলিল জানান, সাপের কামড়ে মৃত সাইফুল ইসলামের জানাজার সময় নির্ধারণ করে দুপুরে এলাকার মাইকে ঘোষণা করা হয়। খোঁড়া হয় কবরও। কাফনের কাপড় পরোনো হয়েছিল। হঠাৎ এক ওঝা এসে মৃত সাইফুল ইসলামের উপসর্গ দেখে চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে জীবিত করা সম্ভব বলে স্বজনদের জানান। পরে স্বজনরা ওঝার কথা বিশ্বাস করে ঝাড়ফুঁকের আয়োজন করে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (রাত সাড়ে ৯টা) তার জানাজা বা ঝাড়ফুঁক কিছুই হয়নি।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভুষণ দাস বলেন, সাপে কাটা কোনো ব্যক্তিকে চিকিৎসক কর্তৃক মৃত ঘোষণা করার পর কোনো চিকিৎসায় জীবিত করার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটা সমাজের কুসংস্কার। যত দ্রুত সম্ভব মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করা উচিত।

কালিয়াকৈর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম নাসিম বলেন, এক যুবককে সাপে কেটেছে সকালেই শুনেছি। যেহেতু তার পরিবারের আত্মবিশ্বাস যদি ওঝা ভালো করতে পারে, সেজন্য এ আয়োজন করেছে। উৎসুক জনতার ভিড় রয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।