ঢাকা,  সোমবার  ০১ জুলাই ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে চালু হবে জুলাই ২০২৫-এ

প্রকাশিত: ১০:২২, ২৯ জুন ২০২৪

আপডেট: ১০:২৩, ২৯ জুন ২০২৪

ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে চালু হবে জুলাই ২০২৫-এ

সংগৃহিত ছবি

ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ আগামী বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছে নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের বৃহত্তম এই এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে ঢাকায় প্রবেশ না করে গাজীপুর থেকে মদনপুর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে যানবাহন যাতায়ত করতে পারবে। বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন সহজে দেশের উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে চলাচল করতে পারবে। ফলে রাজধানী ঢাকায় যানবাহনের চাপ কমবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘মূলত রাজধানীতে গাড়ির চাপ কমাতে ও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন করতেই গড়ে উঠছে দেশের সবচেয়ে বড় এই এক্সপ্রেসওয়ে। মাওয়া ও পূর্বাচলের পর এটি হবে দেশের তৃতীয় এক্সপ্রেসওয়ে।’ এই এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী গাড়ির প্রকারভেদে ২০০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

জয়দেবপুর থেকে মদনপুর পর্যন্ত ঢাকা বাইপাস সড়কটিকে আগের দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নতি করে ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়েছে। এছাড়া পাশে দুটি সার্ভিস লেন থাকবে স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এ পুরো সড়কে আগে যেখানে দুই ঘণ্টা সময় লাগতো, সেটা আধাঘণ্টায় নেমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বর্তমানে নির্মাণাধীন প্রকল্পের দুপাশের বেশিরভাগ অংশেই সার্ভিস লাইনে এখনও কার্পেটিং না পড়ায় ভোগান্তি রয়েছে চলাচলকারীরা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রথম পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের অধীনে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যায় ধরা হয়েছে। নিদৃষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হলে প্রকল্প ব্যায় আরও বাড়তে পারে।’ তারা জানান, ‘সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সড়কটি নির্মান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সড়কটির প্রায় ৬৫ শতাংশ নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর জুলাই ২০২৫ এর মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য এই এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হবে।’

প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সিচুয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ (গ্রুপ) কর্পোরেশন লিমিটেড (এসআরবিজি), শামীম এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড (এসইএল) এবং ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (ইউডিসি) নামের তিন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এই তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চায়না এসআরবিজি প্রতিষ্ঠানের ৬০ শতাংশ এবং বাংলাদেশী দুই প্রতিষ্ঠান এসইএল ৩০ শতাংশ এবং ইউডিসি-এর ১০ শতাংশ অংশগ্রহণ রয়েছে। প্রকল্পের আর্থিক পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।’

প্রকল্পের চিফ অপারেটিং অফিসার শফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, ‘বাংলাদেশে এই ধরনের প্রকল্পের মধ্যে এটিই একমাত্র প্রকল্প যেখানে ইটের কোন ব্যবহার নেই। এইপকেল্পে আমরা সেমি-রিজি পেভমেন্ট ব্যবহার করেছি। এর ফলে সাধারণ পিচ ঢালাই রাস্তার মতো বৃষ্টির পানিতে কোন ক্ষতি হবে না। তাই এই এক্সপ্রেসওয়ের রক্ষনাবেক্ষন খরচ অনেক কম হবে এবং টেকসই হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ, বিদ্যুৎ ও পানির মতো কিছু কাজের জন্য সময় কিছু বেশী লাগতে পারে। কারন এগুলো সরকার এখনও আমাদের সম্পূর্ণ বুঝিয়ে দিতে পারেনি। তবে আমরা নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য চেষ্টা করছি।’

গাজীপুরের মীরের বাজার এলাকায় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ‘মিডিয়া পাবলিক ডে’ অনুষ্ঠানে কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার আবুল বাশার সংবাদকে বলেন, ‘৪৮ কিলোমিটারের ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে ২৪ ঘন্টা সম্পূর্ণভাবে সিসি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষন করা হবে। এজন্য প্রায় ৮০০ ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।’ তিনি জানান, ‘ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কে৪ থেকে কে২২ পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়ক (টোল লেন) প্রাথমিকভাবে গাড়ী চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। প্রস্তুত হওয়া অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সব সেতুর সাবস্ট্রাকচার সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং সড়কের সার্ভিস রোডগুলির নির্মাণ কাজ চলছে।’

প্রকল্পের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার শামীম আহমেদ খান সংবাদের সাথে আলাপকালে বলেন, ‘প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ১৫ মে ২০২২ সালে। প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার সময় থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত রক্ষনাবেক্ষন থেকে শুরু করে টোল আদায় সবকিছুই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রেনে থাকবে।’ যেহেতু এখানে আধুনিক প্রযুক্তির সেমি-রিজি পেভমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, তাই আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত রক্ষনাবেক্ষনের জন্য তেমন কোন খরচের প্রয়োজন হবে না বলে আশা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সিইএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং জিয়ানশি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং চীন-বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোরের আওতায় চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে এমন সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন।

মিডিয়া ডেতে ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) সিইও জিয়াও ঝিমিং বলেন, ‘এ এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশের মহাসড়কে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। এটি নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে। পাশাপাশি এ সড়ক ঢাকার ট্রাফিক নেটওয়ার্কের উন্নতি, যানজট নিরসন এবং প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার পরে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।’

জিয়াও ঝিমিং বলেন, ‘প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য তৃতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে একটি বাস্তব সহযোগিতা প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। যা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চমানের সহযোগিতার উদাহরণ।’