ঢাকা,  বুধবার  ১৬ অক্টোবর ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

গাজীপুরে নাট মন্দির ভাঙচুর, আটক ২

প্রকাশিত: ২০:৩১, ৩০ আগস্ট ২০২৪

গাজীপুরে নাট মন্দির ভাঙচুর, আটক ২

সংগৃহিত ছবি

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজার (রঙ্গারটেক) এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নাট মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে। এঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে।

আটকরা হলো গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকার বাসিন্দা ইন্তাজ মিয়ার ছেলে মো. লেবু মিয়া (৪৭) এবং নাটোরের আব্দুলপুর গ্রামের ফরিদ হোসেনের ছেলে মো. মুরাদ হোসেন (২৫)।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯ টায় লেবু মিয়া নামের এক ব্যাক্তি তার লোকজন নিয়ে মন্দিরটি ভাংচুর করে।

তাৎক্ষণিক ভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই শতাধিক লোক লাঠিসোটা নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। ঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, উপজেলার সফিপুর বাজার (রঙ্গারটেক) এলাকার সফিপুর সার্বজনিন শ্মসানঘাট ও রাধাগবিন্দ লোকনাথ নাট মন্দির রয়েছে। সেখানে স্থানীয় লেবু মিয়া ওরফে লেবু কন্টাকদার (ঠিকাদার) বিতর্কিত জমি ক্রয় করে দখল করার চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানে দীর্ঘদিন ধরে মন্দির থাকায় জমিতে দখলে যেতে পারেনি। লেবু মিয়া শুক্রবার সকালে ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী ভাড়া করে ওই জমি দখলে যায়। এসময়ে হামলা চালিয়ে নাটমন্দির ভাংচুর করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বেরিয়ে এসে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাদের উপরও হামলা চালায়। এতে ১০-১২ জন আহত হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। এসময়ে মুরাদ হোসেন নামের এক জনকে আটক করে। নাট মন্দির ভাঙ্গার প্রতিবাদে দুই শতাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সফিপুর বাজার এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।

সফিপুর সার্বজনিন শ্মসানঘাট ও রাধাগবিন্দ লোকনাথ নাট মন্দিরের যুগ্ম আহবায়ক হরিপদ সরকার বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে এখানে মন্দির রয়েছে। মন্দিরের জায়গার একটি ভুয়া দলিল তৈরি করে মন্দিরের জমি দখল করার পায়তারা করে আসছে। বিগত সময়ে তারা দখল করতে গিয়ে ফিরে এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় লেবু মিয়া নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করে লোকজন নিয়ে এসে মন্দিরটি ভাংচুর করে।

সফিপুর সার্বজনিন শ্মসানঘাট ও রাধাগবিন্দ লোকনাথ নাট মন্দিরের আহবা য়ক প্রকৌশলী কৌশিক অধিকারী বলেন, লেবু মিয়া নামের এক ব্যাক্তি নিজেকে রাজনৈতিক নেতা দাবি করে ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের নাট মন্দির ভাঙচুর করে। এসময়ে বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের লোকজনের উপর হামলা চালিয়ে আহত করে।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ বলেন, মন্দিরে হামলার ঘটনাটি জেনে তাৎক্ষণিকভাবে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে জানিয়েছি। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ইতিমধ্যে পুলিশ দুইজনকে আটক করেছে। জমি নিয়ে বিরোধ থাকলে সেটা আইনগত ভাবে সমাধান করা যেতো, মন্দিরে হামলা না করলেও পারতো।

খবর পেয়ে বিকেলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আযাদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহম্মেদসহ জেলা ও থানার পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করে প্রয়োজণীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আযাদ জানিয়েছেন, মন্দির কমপ্লেক্সে নাট মন্দির ছাড়াও শ্মশান ও একটি টিনশেড ঘর রয়েছে। হামলাকারীরা মন্দির কমপ্লেক্সে থাকা টিনশেড ঘরটি ভাংচুর করেছে। জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করেই ওই হামলার ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীণ।

ঘটনা জানতে লেবু মিয়ার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।