ছবি: সংগৃহীত
রোজ নিজের অজান্তে খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করছে অসংখ্য ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’। এটি কী? মূলত মাইক্রোপ্লাস্টিক বলতে অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণাকে বোঝানো হয়। স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, এটি শরীরের জন্য সাক্ষাৎ যম। নিয়মিত যা শরীরে প্রবেশ করলে ক্ষতি হতে পারে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের। এমনকি ক্ষতি হতে পারে ডিএনএ’র ও। মাইক্রোপ্লাস্টিক কমিয়ে দেয় প্রজনন ক্ষমতা, নষ্ট করে দিতে পারে কোষ।
সমস্যা হলো, শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রবেশ আটকানো কঠিন। পরিবেশবিদেরাই বলছেন, এ যুগে এটির শরীরে প্রবেশ অবধারিত। কারণ, প্লাস্টিক কণা কেবল খাবারে মিশে নয়, ত্বকের রন্ধ্র এমনকি, শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমেও শরীরে ঢুকতে পারে।
তবে কিছু কিছু বিষয়ে সতর্ক হলে, মাইক্রোপ্লাস্টিক অনেকটাই এড়ানো যেতে পারে। চলুন এসম্পর্কে বিশদভাবে জেনে নিই-
খাবার পানি সবসময় ফিল্টার করুন
কলের পানিতেও মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকতে পারে। তাই সবসময় ফিল্টার করে পানি পান করুন। ফিল্টার মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা অনেকটাই ছেঁকে ফেলে। ‘রিভার্স অসমোসিস’-এর মতো আধুনিক ফিল্টার পদ্ধতি এক্ষেত্রে আরও কার্যকরী।
প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে চলুন
বাড়িতে রান্না করা খাবার খান। বাইরে থেকে কেনা প্রক্রিয়াজাত বা প্যাকেটজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। প্লাস্টিকের পাত্র থেকে খাবারে প্লাস্টিক কণা মেশার সুযোগ থাকে। বিশেষ করে গরম খাবার প্লাস্টিকের পাত্রে থাকলে তা থেকেও প্লাস্টিক কণা খাবারে মিশে যেতে পারে। বাড়িতে রান্না করা খাবারের মাধ্যমে এই বিপদ এড়ানো যায়।
ধাতব বা কাচের পাত্র ব্যবহার করুন
বাড়িতেও কোনো খাবার রাখার ক্ষেত্রে কাচ বা ধাতব পাত্র ব্যবহার করুন। এগুলো অনেক বেশি নিরাপদ। কারণ, কাচ বা ধাতব পাত্র খাবারকে দূষিত করে না। অন্যদিকে প্লাস্টিক কোনোভাবে গরম হলে কিংবা ভেঙে গেলে খাবারে মিশতে পারে।
একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক বর্জন করুন
মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে ঢোকার সহজ মাধ্যম হলো গ্লাস, প্যাকেট, স্ট্র-এর মতো একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক। প্যাকেটজাত খাবারের ক্ষেত্রে এই ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার হয় বেশি। প্লাস্টিকের কাঁটা-চামচ, কৌটো, ট্রে ইত্যাদি একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়। পরিবেশবিদেরা বলছেন, হয় পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস ব্যবহার করুন অথবা পরিবেশবান্ধব জিনিসের ব্যবহার করুন।
পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করুন
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ, যেমন চট বা সুতির ব্যাগ ব্যবহার করুন। সুতি, উল, লিনেনের পোশেক ব্যবহার করুন। পলিয়েস্টার জাতীয় পোশাক এড়িয়ে চলুন। এতে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমবে।
সামুদ্রিক খাবারেও রয়েছে প্লাস্টিকের উপস্থিতি
গবেষকরা সামুদ্রিক মাছেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছেন। মানুষের বর্জ্যসহ বহু প্লাস্টিক গিয়ে জমছে সমুদ্রের পানিতে। তাতেই বেড়ে উঠছে মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী। সমুদ্রের পানিতে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক মাছের দেহ থেকে মানুষের খাবারে মিশতেও পারে।
প্রসাধন সামগ্রীতেও আছে প্লাস্টিক
কেবল খাবার নয়, নিত্যদিনের শারীরিক পরিচর্যার সামগ্রীর মাধ্যমেও মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করতে পারে শরীরে। টুথপেস্ট, স্ক্রাব, প্রসাধনী কেনার আগে লেবেল দেখে নিন। উপকরণের তালিকায় পলিথিন বা পলিপ্রপিলিন জাতীয় কোনো নাম থাকলে অবশ্যই তা এড়িয়ে চলুন।