ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ০৪ জুলাই ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

নানা কাজের কাজি সূর্যমুখী ফুল

প্রকাশিত: ২৩:২২, ১ জুলাই ২০২৪

নানা কাজের কাজি সূর্যমুখী ফুল

ছবি: সংগৃহীত

সূর্যমুখী ফুল এর রূপ ও সূর্যমুখী বীজ এর গুন দুই দিকেই সে অতুলনীয়। সূর্যমূখী এক ধরনের একবর্ষী ফুল গাছ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফুলের বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। দৃষ্টিনন্দন ফুল হিসেবে সূর্যমুখী সবার কাছে পরিচিত। ফুলটি তেলবীজ হিসেবেও দারুণ সমাদৃত। সূর্যমুখীর বীজ ও তেলে রয়েছে নানা উপকারী গুণ। আমাদের শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরকে দীর্ঘদিন কর্মক্ষম রাখতেও সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য। 

এবার জেনে নেয়া যাক সূর্যমুখী নানা ধরনের উপকারী গুণাগুণ সম্পর্কে-

পুষ্টিমান

সূর্যমুখীর ক্ষুদ্র বীজগুলোতে রয়েছে  প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান।  এতে মজুত আছে 20% প্রোটিন, ৩৫-৪২% তেল এবং ৩১% অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড। এছাড়া  ভিটামিন হিসেবে রয়েছে  এ, বি ৩, বি ৫, বি ৬, ই, ফোলেট। তামা, ম্যাংগানিজ, আয়রন, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম এর মত খনিজ উপাদান, ডায়েটি ফাইবার আর প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড  (লিনোলিক অ্যাসিড, ওলাইক অ্যাসিড) পাওয়া যাবে এই বীজটিতে। এগুলিতে ফ্লেভোনয়েডস এবং ফেনলিক অ্যাসিডের মতো প্রচুর উদ্ভিদ যৌগ রয়েছে যা এর শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী।

সূর্যমুখী ফুল ও বীজের উপকারিতা 

হজমে সহায়তা করে: ভোজনরসিক বাঙালির প্রায়শই হজমের মত সমস্যায় ভুগতে হয়। সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য তো আছেই। নিয়মিত সূর্যমুখীর বীজ গ্রহণ আপনাকে এমনসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিবে। কারণ এতে আছে উন্নত ডায়েটারি ফাইবার যা আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে: সূর্যমুখী ফুল হৃদ্‌রোগ – এক আতঙ্কের নাম, যা মুহূর্তেই কেড়ে নেয় প্রাণ। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণ। সূর্যমুখীর বীজের উপাদান ম্যাগনেসিয়াম আপনার রক্তচাপ কমিয়ে রক্তনালিকে শিথিল রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের বিশেষ করে লিনোলিক অ্যাসিডের নিম্ন রক্তচাপে অবদান রাখে। পাশাপাশি এটি রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমায়। 

রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস: সূর্যমুখীর বীজ টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর জন্য সবচাইতে বেশি স্বাস্থ্যকর ও কার্যকর। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী।  গবেষণার তথ্যানুসারে, ডায়েটের অংশ হিসেবে যারা প্রতিদিন ১ আউন্স (৩০গ্রাম) সূর্যমুখীর বীজ খেয়ে থাকেন তাদের রক্তে শর্করার প্রায় ১০% হ্রাস পায়।

হাড় মজবুত এবং গঠনে ভূমিকা রাখে: সূর্যমুখী ফুল ত্রিশ ঊর্ধ্ব হলেই দেখা যায় হাড় ক্ষয় বা জয়েন্টে নানান সমস্যা। এমন সমস্যায় ভুগে থাকলে আপনাকে সাহায্য করবে সূর্যমুখী বীজ। কারণ এতে উচ্চমানের ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। যা আপনার হাড়ের কাঠামো শক্তিশালী করে তোলে, জয়েন্টে সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

এন্টি–ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব: এতে বিদ্যমান ভিটামিন ই আপনার দেহের প্রদাহজনিত রোগের জন্য কাজ করে। ফ্লাভিনয়েডসও শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

ওজন হ্রাসে সূর্যমুখীর বীজ: ওজন হ্রাস বরাবরই এক দীর্ঘ যাত্রা। আপনার এ যাত্রা কিছুটা সহজ করে দিবে এ ছোট বীজটি। এর পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট আপনার ওজন কমানোর ডায়েটে একটি বিশেষ অংশ হতে পারে। এর ভিটামিন বি এবং ই ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করে।এটি যেমন পুষ্টিকর তেমন দীর্ঘ সময় আপনার পেটকে পরিপূর্ণ রাখে।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: বর্তমানে মানসিক সমস্যায় ভোগে অনেকেই। বিশেষ করে আমাদের তরূন সমাজ। তবে এ নিয়ে কথা বলতে নারাজ। প্রতিযোগিতার এ যুগে হরেক রকম কারণে মানসিক চাপ, উদ্বেগে ভুগতে হচ্ছে প্রতি নিয়ত। সূর্যমুখী ফুল এ রয়েছে ট্রিপটোফেন নামক এ্যামিনো অ্যাসিড যা শরীরে সেরোটোনিন রিলিজ করে। এটি মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে এছাড়াও হতাশা ও মানসিক চাপ কমায়। ফলে অ্যাংজাইটি এ্যাটকের মত ভয়াবহ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মেলে।

এন্টি এজিং হিসেবে: সূর্যমুখীর বীজ প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই পাওয়া যায়। যা আপনার ত্বকের এজিং প্রসেসকে ধীর করতে সহায়তা করে। এছাড়া রেডিকাল ক্ষতি, সূর্য রশ্মি এবং বিভিন্ন ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে। এর বীজে উপস্থিত কপার মেলানিন তৈরি করে। যা ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বক সুরক্ষা দেয়। তাই দৈনিক খাবারের সাথে ক্ষুদ্র এই সদস্যটিকে যোগ করতে ভুলবেন না।

ত্বক জীবাণুমুক্ত করে: সারাদিনের ব্যস্ততায় অনেকেই ত্বকের যত্নের দিকে খেয়াল রাখে না। ফলস্বরূপ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা নানা ভাবে ক্ষতি হয় ত্বকের। তবে আপনার রোজকার খাবারে যদি থাকে সূর্যমুখীর বীজ তবে আর দুশ্চিন্তা নয়। কারণ এর প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডের রয়েছে এন্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। যা আপনাকে বিভিন্ন রোগ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দেবে।

চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে: রুক্ষ চুলের সমস্যা নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। তাই চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য সূর্যমুখী ফুল এবং বীজের বিকল্প আর কি হতে পারে। এর ওমেগা৬ চুলের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা পুনরুদ্ধার করে । চুলকে কোমল  আর প্রাণোজ্জ্বল করে তুলে। এছাড়া নতুন চুল না গজানোর সমস্যা কম বেশি সকলেরই আছে। এর একটি প্রধান কারণ হতে পারে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা। সূর্যমুখী বীজে মজুত জিংক এবং ভিটামিন ই রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম।

আবার এই বীজে উপস্থিত ভিটামিন বি৬ আপনার চুল পড়া বন্ধ করে। আকারে ছোট হলেও এর কার্যক্ষমতা ব্যাপক। নিয়মিত নাস্তায় যুক্ত করে নিলে এর অসাধারণ স্বাস্থ্যকর গুণাগুন আপনাকে আরো সুস্থ এবং প্রাণবন্ত করে তুলবে।