ঢাকা,  সোমবার  ০১ জুলাই ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ফলনের পাশাপাশি চাহিদাও বেশি, লটকন চাষিদের মুখে হাসি

প্রকাশিত: ১১:১৯, ২৯ জুন ২০২৪

ফলনের পাশাপাশি চাহিদাও বেশি, লটকন চাষিদের মুখে হাসি

ফাইল ছবি

স্থানীয়ভাবে ‘বুগি’ নামে পরিচিত ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ দেশীয় জাতের ফল লটকন। অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণে ভরপুর লটকনকে একসময়ে জংলি ফল বলা হতো। বন-বাদাড়ে ঝোপঝাড়ে জন্ম নেওয়া গাছে ধরে থাকতো এ ফল। তেমন একটা কদর ছিল না। তবে সময়ের ব্যবধানে এ ফলের পুষ্টিগুণ সবার জানা। তাই ফলটির কদর বেড়েছে বহুগুণ। এই ফলের বৃক্ষ মাঝারি আকারের চিরসবুজ। ফল গোলাকার, পরিপক্ব হলে এ ফল হলুদ বর্ণ ধারণ করে। আশানুরূপ ফলনের পাশাপাশি লটকনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় খুশি নরসিংদীর চাষিরা। ব্যাপক উৎপাদনের পাশাপাশি বাজার দর ভালো পাওয়ায় জেলায় বাড়ছে লটকনের চাষ।

নরসিংদী জেলা কৃষি ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ হয়েছে। এটি গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০০ হেক্টর জমি বেশি। অন্যান্য এলাকার তুলনায় মাটির গুণ ও আবহাওয়ার জন্য জেলার শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলায় লটকন চাষ বেশি হচ্ছে। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ১৭ টন লটকন উৎপাদিত হচ্ছে। সেই হিসাবে ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩০ হাজার টন লটকন উৎপাদন হয়েছে।

নরসিংদীর শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার বিশাল অঞ্চল টিলা ও ঢালাসমৃদ্ধ লালমাটির এলাকা। গ্রামের ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে ছায়াঘেরা লটকন বাগান। বাগানের অধিকাংশ গাছের গোড়া থেকে উপরি অংশের শাখা-প্রশাখায় লটকন জড়িয়ে আছে। দেখতে মনে হয় যেন পুরো গাছে লটকনের ফুল ফুটছে। বাগানে ঘুরতে ঘুরতে গাছে পাকা লটকন দেখে জীবে জল এসে যায়।

শিবপুরের চৈতন্যা গ্রামের মো. আসাদ মিয়া জানান, প্রায় ২০ বছর আগে বিশ হাজার টাকা খরচ করে ৪ বিঘা জমিতে ৮৫টি লটকনের চারা রোপণ করি। চারা রোপণের পাঁচ বছর থেকেই ফলন দিচ্ছে। বর্তমানে আমার বাগানে ৭০টি লটকন গাছ রয়েছে। ফলন আসার আগে থেকেই গাছের গুড়ি পরিষ্কার করা, পানি দেওয়া, জৈবসারসহ বিভিন্ন লায়েক দিয়ে থাকি। এ বছর আমার বাগানে মোট ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করি সব খরচ বাদ দিয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা লাভ হবে। এ ছাড়া কৃষি অফিসাররা যদি আমাদের বাগান পরিদর্শন করতো এবং পরামর্শ দিতো তবে আমাদের বাগানের ফলন আরও ভালো হতো। আমরা আরও লাভবান হতে পারতাম।

বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেন নামে প্রবীণ এক ব্যক্তি জানান, লটকন গাছ সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে রোপণের উপযুক্ত সময়। বর্ষার শেষের দিকে অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও গাছ লাগানো যায়। লটকনের গাছ লাল মাটিতে ভালো জন্মায়। প্রতিবছর মাঘ-ফাল্গুনে লটকন গাছে মুকুল আসা শুরু হয়। আষাঢ় মাসে এ ফল পরিপক্বতা পায়। এটি চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। স্ত্রী গাছ লাগিয়ে দিলেই হয়। সময়ে সময়ে একটু পরিচর্যা করতে হয়। গোড়ার চারদিকে জৈবসার দিলে ফলন ভালো হবে। পিঁপড়া বা পোকামাকড়ের হাত থেকে ফল বাঁচাতে ছত্রাকনাশক দিতে হয়।

লটকন ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন জানান, নরসিংদী থেকে লটকন কিনে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও এই লটকন রপ্তানি করা হচ্ছে। প্রকারভেদে পাইকারিভাবে বাজারে মণ প্রতি দাম ওঠে ৩ হাজার ৫শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত, যা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

রায়পুরা উপজেলার পুটিরবাজার এলাকার লটকন চাষি তৌফিক আহমেদ বলেন, স্থানীয় বাজার ছাড়াও লটকনের ফল ধরার পর বাগান বিক্রি করে দেওয়া যায়। পাইকাররা বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, লটকন চাষ বাড়াতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চারা উৎপাদন করাসহ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারে রপ্তানি হওয়াতে কৃষকরা লটকনের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। এখানকার মানুষ লটকন চাষের দিকে আরও ঝুঁকছেন। নরসিংদী জেলায় ১৯০০ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে শিবপুরে। চলতি মৌসুমে লটকনের মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন।